ফুটবল ছেলে রনি ফুটবল নিয়ে যাচ্ছে ব্রাজিলে।
ফুটবল ছেলে রনি ফুটবল নিয়ে যাচ্ছে ব্রাজিলে।
বুট কেনার সামর্থ্য না থাকায় খালি পায়ে ফুটবল খেলতেন রনি মিয়া। মাঝে মাঝে ভাইয়ের বুট ধার করে খেলতেন। কিন্তু বড় সাইজের বুট হওয়ার কারণে পরে খেলার ঝুঁকি থাকে। চোটের কারণে খেলা থেকে বাদ পড়তে হয় রনিকে।
শুধু ইনজুরি নয়, দারিদ্র্যের প্রাচীরও সামনে দাঁড়িয়ে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন রনি। কিন্তু বিভোর রনি স্বপ্ন দেখেন সব বাধা অতিক্রম করে ফুটবলার হওয়ার। সেই স্বপ্ন পূরণের পথে হবিগঞ্জের ১৬ বছর বয়সী এক ছেলের জন্য বড় পদক্ষেপ হলো ফুটবলের দেশ ব্রাজিলে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য যাওয়া।
2016 সালে ঢাকায় ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত জোয়াও তাবাজারা ডি অলিভেরা জুনিয়র বাংলাদেশী কিশোর ফুটবলারদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্রাজিলে পাঠানোর উদ্যোগ নেন। তার সহযোগিতা ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টায় দ্বিতীয়বারের মতো ব্রাজিল যাচ্ছে বাংলাদেশের কিশোর ফুটবলারদের একটি দল। 2019 সালে চারজন গিয়েছিল। এবার সংখ্যা বেড়ে 11 হয়েছে। রনি সেই দলের একজন।
সব ঠিক থাকলে মে মাসে ব্রাজিলে যাবেন ফুটবলাররা। বিকেএসপির চূড়ান্ত বাছাই শেষে হবিগঞ্জে ফিরেছেন রনি। বর্তমানে জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তার মাধ্যমে পাসপোর্ট প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন রনি। পুরো বিষয়টি রনির কাছে স্বপ্নের মতো
গল্পটা শুনলেই বুঝতে পারবেন কারণটা। রনির পারিবারিক অবস্থা নুন পাওয়ার চেষ্টা করার মতো। বৃদ্ধ বাবা তৈয়ব আলী পাহাড় থেকে কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করতেন। সেই আয়ে কোনোমতে সংসার চলছিল। ভাত না পেলেও ফুটবল মাঠে মন রাখতেন রনি। এভাবে খেলতে খেলতেই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্কুল ফুটবলে খেলার সুযোগ হয়। সেখানে আলাদাভাবে সবার নজর কেড়েছে রনি। সিলেট বিকেএসপিতে বিচার শেষে সাভার বিকেএসপিতে ভর্তির সুযোগ পান।
কিন্তু সমস্যাও আছে। বিকেএসপির নির্ধারিত মাসিক বেতন দিতে না পারায় রনি পালিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। রনি বলেন, আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। বাবা বিকেএসপির বেতন দিতে পারেননি। তাই বিকেএসপি ছেড়েছি। '
বিকেএসপি ছাড়ার পর বাবাকে সাহায্য করতে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে শ্রমিকের কাজ করতে যান রনি। এলাকায় নদী থেকে বালু তোলার সময় বাবার হাতে টাকা তুলে দিতেন, "তখন কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। বাবার কষ্ট দেখে আমার খুব খারাপ লাগছিল। এক পর্যায়ে আমি শ্রমিকের কাজ শুরু করি। বালি তৈরির মেশিনের জন্য।'
এলাকার বিভিন্ন ফুটবল টুর্নামেন্টে নিয়মিত অংশ নেন রনি। ব্যারিস্টার সাইদুল হক (সুমন) এমন একটি টুর্নামেন্টে রনির পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়ে তাকে নিজের ফুটবল একাডেমিতে ভর্তি করেন। কিন্তু সেই একাডেমিতে যেতেও আপত্তি রনি।
কারণ আর্থিক সংকট, বড় ভাইকে বিদেশে পাঠাতে জমি বন্ধক রেখেছিলেন বাবা। ভাই টাকা দিতে রাজমিস্ত্রির চাকরি নেন। বালি তুলতাম। আমি সুমন ভাইকে বলেছিলাম ফুটবল খেললে বাড়তি কিছু পাব না। তিনি সঙ্গে সঙ্গে আমাকে এক লাখ টাকার চেক দেন এবং আমাকে একাডেমিতে ভর্তি করেন।'
মোটা অংকের টাকা পেয়ে রনি বন্ধক রাখা জমি খালাস করেন। এরপর তিন বছর ব্যারিস্টার সুমনের একাডেমিতে খেলেন। গত বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুর্ধ্ব-১৬ গোল্ডকাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সিলেট বিভাগ। সেই দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার ছিলেন রনি।
রাইটব্যাক পজিশনে খেলে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের বিভাগীয় দলে সুযোগ পেতে বেশ কিছু ধাপ অতিক্রম করতে হয়েছে রনিকে। রনি প্রথমে ইউনিয়ন পর্যায়ের দলে খেলতেন। সেখানে তার দল হেরে গেলেও ওই দল থেকে নির্বাচিত খেলোয়াড়দের নিয়ে থানা পর্যায়ের দল গঠন করা হয়। একইভাবে থানার সেরা খেলোয়াড়রা জেলা পর্যায়ের দলে সুযোগ পায়।
অবশেষে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলার সেরা ফুটবলারদের নিয়ে বিভাগীয় দল গঠন করা হয়। এরপর ব্রাজিল সফরের জন্য দেশের ৬টি বিভাগের সেরা ৪০ জন ফুটবলারের মধ্য থেকে ১১ জনকে বাছাই করা হয়েছে। সেই বাছাইয়ে টিকে থেকে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন রনি।
চুনারুঘাট কচুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্র এখন ভাবছে, ‘আমি কখনো ভাবিনি ফুটবলে ফিরব। তবে ফুটবল খেললে নেইমারের দেশে যাব। তার মানে এই নয় যে এটা ভালো লাগছে।"
গত বছর বাফুফের এলিট একাডেমিতে ট্রায়াল হয়েছিল রনির। এক বন্ধুর সঙ্গে ঢাকায় এসে বাছাইয়ে অংশ নেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মহা বিপাকে পড়েন তিনি। তবে ফুটবলের লড়াইয়ে তিনি কখনোই হাল ছাড়েননি, বলেছেন, "আমি আর আমার বন্ধু একসঙ্গে ট্রায়াল দেব।" আমার সেই বন্ধু বিচারে বেঁচে গেছে। তবে ড্রপ আউট করার পর আরও ভালো অনুশীলন করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। কয়েকদিন আগে সেই বন্ধু এলিট একাডেমি থেকে ঝরে পড়ে। তবে এবার ব্রাজিলে যাচ্ছি। '
পোস্টের নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ‘‘ফেসবুক পেজে” লাইক দিয়ে রাখুন।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে নিচের ফেসবুক, টুইটার বা গুগল প্লাসে
শেয়ার করে আপনার টাইমলাইনে রেখে দিন। এতক্ষণ সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
No comments