আধুনিক সিঙ্গাপুরেও মেয়েদের খৎনা করানো হয়
সিঙ্গাপুরের মেয়ে জারিফাহ আনোয়ার বয়স ২৩ বছর
হওয়ার আগ পর্যন্ত জানতেন না ছোটবেলায় খৎনা করানো হয়েছিল তার। জারিফাহর বয়স যখন দুই
সপ্তাহ তখন এক ধাত্রীর কাছে তুলে দেয়া হয় তাকে। এ ধরনের ধাত্রীদের স্থানীয় ভাষায়
বলা হয় ‘বিদান’। ওই ধাত্রীই তার ভগাঙ্কুর (ক্লিটরিস) কেটে খৎনার কাজটি সম্পন্ন
করেছিলেন।
বড় হওয়ার পর জারিফাহর এক সহকর্মী তাকে তার
খৎনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল। জারিফার সোজা উত্তর, ‘এ ধরনের কিছু ঘটলে আমি অবশ্যই
জানতাম।’ ওই সহকর্মী জারিফাকে তার মায়ের কাছে বিষয়টি জিজ্ঞেস করার জন্য বলে।
জারিফাহও তাই করল। এ নিয়ে মায়ের সঙ্গে একটু তিক্ততাও হয় তার। জারিফাহর ভাষায়, ‘আমি
মাকে জিজ্ঞেস করতে থাকি- আমি কি কেঁদেছিলাম? আমি কি তখন ঘুমিয়ে ছিলাম? তিনি আমাকে
কোনো উত্তর দেননি।’
বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার (ডব্লিওএইচও) মতে,
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ২০ কোটি নারীকে ছোটবেলায় খৎনা করানো হয়েছিল। স্থানভেদে এর
পদ্ধতির মধ্যে সামান্য পার্থক্য আছে। কোথাও ভগাঙ্কুরের আংশিক কাটা হয়, আবার কোথাও
পুরোটাই কেটে ফেলা হয়। কোথাও কোথাও যৌনাঙ্গের লেবিয়াতে সেলাই করে দেয়া হয়।
সিঙ্গাপুরের বেশিরভাগ মানুষেরই বিষয়টি নিয়ে
সামান্য ধারণা রয়েছে। প্রথাটি দেখা যায় দেশটিতে বসবাসরত মালয় মুসলিমদের মধ্যে। এরা
এই নগররাষ্ট্রটির মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ। মেয়েদের খৎনা করানোকে স্থানীয় ভাষায় বলা
হয় ‘সুনাত পেরেমপুয়ান’। বয়স দুই বছর হওয়ার আগেই এই কাজটি সম্পন্ন করা হয়।
জারিফাহর মতো ছোটবেলায় খৎনা করানো হয়েছিল
সিঙ্গাপুরের আরেক মেয়ে ফিজলাহ সুমারতোনোর। তিনিও বড় হয়ে জানতে পেরেছেন তার খৎনার
বিষয়টি। এ সম্পর্কে ফিজলাহ বলেন, ‘আমার অনেক ভারতীয় মুসলিম বন্ধুই বিষয়টি সম্পর্কে
কিছুই জানে না। মালয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন একটি প্রথা আছে এটা জানতে পেরে তারা
বিস্মিত হয়।’
মেয়েদের খৎনার বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে কোনো আইন
নেই। বিষয়টি নিয়ে দেশটির মুসলিমরা দ্বারস্থ হন সেখানকার ফতোয়া সংস্থা ‘ইসলামিক
রিলিজিয়াস কাউন্সিল অব সিঙ্গাপুর’র (এমইউআইএস)। সংস্থাটির ইব্রাহিম সাওইফি জানান,
দেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এমন কোনো ধরনের প্রক্রিয়াই তারা সমর্থন করেন না।
এমইউআইএস মেয়েদের খৎনা প্রথা রদ করার জন্য বারবার আহ্বান জানিয়ে এসেছে বলেও জানান
তিনি।
তবে অনেক মালয় মুসলিম, বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠ
প্রজন্মের লোকেরা মনে করে, এ ধরনের প্রক্রিয়া মেয়েদের যৌনচাহিদা কমিয়ে দেয়। ফলে
বিয়েবহির্ভূত যৌনসম্পর্কের ঝুঁকি থাকে না। অনেকের ভুল বিশ্বাস আছে যে, এটি ইসলামে
বাধ্যতামূলক। যদিও কোরান বা হাদিসে এ ধরনের কাজকে বাধ্যতামূলক করা হয়নি।
আর্টিকেলটি
ভালো লাগলে লাইক ও শেয়ার করুন, প্লিজ।
আমাদের
ফেসবুকপেজে লাইক দিয়ে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।




No comments