ইতিহাস লিখলো মেয়েরা
সাকিব-মাশরাফিরাও যে দুরূহতম কাজটি এতদিন করতে পারেননি, সেটিই যে এবার করে দেখালেন সালমা-রোমানারা। দেশকে এনে দিলেন গর্বের মুকুট। দ্বিপক্ষীয় সিরিজের বাইরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের এটাই প্রথম শিরোপা জয়। যে জয়ের গভীরে গোপন আছে বহু নাটকীয়তাও।
ভাগ্যলক্ষ্মী যেন এদিন সালমাদের সঙ্গেই ছিল। টস নামের ভাগ্য পরীক্ষায় জিতে ফিল্ডিয়ের সিদ্ধান্তটা যে সঠিক ছিল বল হাতে তা দুর্দান্তভাবে প্রমাণ করেছে খাজিদা, রোমানা, জাহানারারা। মাত্র ১১২ রানে ভারতকে বেঁধে ফেলে শিরোপার স্বপ্ন আরও ঘনীভূত করে বঙ্গ মেয়েরা।
দলীয় ১২ রানে সালমা খাতুনের হাতে রান আউটের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরেন স্মৃতি মান্দানা। ২৬ রানে পড়ে দ্বিতীয় উইকেট। এবার দীপ্তি শর্মা। তাকে বোল্ড করে ফেরত পাঠান জাহানারা আলম। এরপর ২৮ রানে তৃতীয় (মিতালী রাজ) ও ৩২ রানে চতুর্থ উইকেট (অনুজা পাতিল) হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত।
তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে ভারতের রানকে ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে থাকেন অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর। খাদিজার বলে জাহানারার হাতে ক্যাচ দেয়ার আগে ৪২ বলে ৫৬ রানের দারুণ এক ইনিংস উপহার দেন কৌর। মূলত তার একার ব্যাটিংয়েই লড়াইয়ের পুঁজি পায় ভারত। অন্যদের মধ্যে ভেদা কৃষ্ণমূর্তি ১১ ও ঝুলন গোস্বামী ১০ রান করেন।
টাইগ্রেসদের হয়ে খাদিজা-তুল কোবরা ও রোমানা আহমেদ ২টি করে এবং সালমা খাতুন ও জাহানারা আলম ১টি করে উইকেট নেন। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১১২ রান করা ভারতকে টপকাতে খুব বেশি বেগ পাওয়ার কথা নয় বাংলাদেশের। কিন্তু ফাইনাল বলে কথা। আর তাই ফাইনালটা হলো ফাইনালের মতোই। ১১৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু এনে দেন শামিমা সুলতানা ও আয়েশা রহমান। হঠাৎ করে ৭ নম্বর ওভারে ছন্দপতন। ওই ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ৩৫ রানে ২৩ বলে ১৭ রান করা আয়েশা ও ওভারের শেষ বলে শামিমাকে (১৯ বলে ১৬) ফিরিয়ে উল্টো ভারতকে ছন্দে ফেরান পুনম যাদব।পর পর দুই বলে দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। তবে ফারজানা হক ও নিগার সুলতানার ২০ রানের জুটিতে ভর করে আরও একটু পথ এগিয়ে যায় দল। ১১ রান করা ফারজানাকে ফিরে আবারও ঘাতক রূপে আবির্ভূত হন সেই পুনম যাদব। বাংলাদেশের পক্ষে ২৪ বলে সর্বোচ্চ ২৭ রানের ইনিংস খেলা নিগার সুলতানাকেও ফেরান সেই পুনমই। প্রথম সারির চার চারজন ব্যাটসম্যানকে আউট করে বাংলাদেশের সামনে মহাআতঙ্ক হয়ে উঠেছিলেন এই ভারতীয় পেসার।
দলীয় ৮৪ রানে নিগার সুলতানা ফিরে গেলে ফাহিমা খাতুনকে নিয়ে জুটি বাঁধেন রোমানা আহমেদ। জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে ৩১ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। হাতে ছিল ৭ উইকেট।এমন পরিস্থিতিতে পরের ওভারেই নিগারকে (২৭) তুলে নেন পুনম। বাংলাদেশের স্কোর তখন ১৫.২ ওভারে ৪ উইকেটে ৮৩। দারুণ বোলিং করেছেন ভারতের এই লেগি। ৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে পেন্ডুলামের মতো ঝুলতে থাকা এই ম্যাচের ভাগ্য ভারতের দিকে টেনে আনার চেষ্টা করেছিলেন পুনম। কিন্তু শেষ দুই ওভারে বাংলাদেশের ব্যাটারদের দৃঢ়তায় ভারতীয় মেয়েরা আর হালে পানি পায়নি।শেষ ২ ওভারে ১৩ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। দীপ্তি শর্মার করা ১৯তম ওভারের মাত্র ৪ রান আসায় শেষ ওভারের সমীকরণটা দাঁড়ায় ৯ রানে। এ যেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচটার চিত্রনাট্য—৬ বলে দরকার ৯ রান!
শেষ ওভারটা করতে আসেন স্বয়ং ভারতের অধিনায়ক হারমানপ্রীত কাউর। তার প্রথম বলে ১ রান নেন সানজিদা। দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি মেরে ম্যাচটা নিজেদের দিকে টেনে আনেন রুমানা। পরের বলে তিনি ১ রান নিলেও চতুর্থ বলে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন সানজিদা। সমীকরণটা নেমে আসে ২ বলে ৩ রানে। পঞ্চম বলে ১ রান নিলেও অনর্থক দুই রান নিতে গিয়ে রানআউট হন রুমানা (২৩)। জয়ের জন্য শেষ বলে দরকার ছিল ২ রান। হারমানপ্রীতের স্ট্যাম্প বরাবর ডেলিভারিটা মিড উইকেটে ঠেলে দিয়েই ২ রান নিয়ে নতুন ইতিহাস লেখেন জাহানারা-সালমা।




No comments